21 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024
[adinserter block="1"]

মৃত্যুর আগ মুহূর্তে মানুষ কী দেখে?

মৃত্যু পথযাত্রীরা যেসব দৃশ্য দেখেন তা তাদের একদম বাস্তব অনুভূতির গভীরতা। গবেষণা বলছে, জীবন সায়াহ্নে থাকা মানুষ সাধারণত তাদের মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া শুরু করেন। মৃত্যুর সময় যত ঘনিয়ে আসে ততই এর তীব্রতা বাড়তে থাকে।

১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে ঘটেছে এমনই বাস্তব এক ঘটনা। ওই সময় মার্কিন চিকিৎসক ক্রিস্টোফার কের তত্ত্বাবধানে ছিলেন মেরি নামের একজন ৭০ বছর বয়সী রোগী।

মেরি তার জীবন সায়াহ্নে এসে অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করেন। মৃত্যুর আগে এক দিন মেরি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলেন। পাশে ছিলেন তার সন্তান, যারা প্রত্যেকেই প্রাপ্তবয়স্ক।

কিন্তু ডা. ক্রিস্টোফার দেখতে পান, হঠাৎ ওই বৃদ্ধা রোগী বিছানায় ওঠে বসেছেন এবং তিনি এমনভাবে নিজের হাত নাড়তে লাগলেন যেন তিনি একটি শিশুকে জড়িয়ে ধরে আছেন। যাকে কেবল তিনিই দেখতে পাচ্ছেন।

আরো পড়ুন  তাপপ্রবাহে নাকাল দেশ, বৃষ্টি কবে জানাল আবহাওয়া অফিস

সেই কাল্পনিক শিশুকে ড্যানি বলে ডাকছিলেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার ভঙ্গি করছিলেন। তবে, তার সন্তানরা এ আচরণের ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এমনকি তারা ড্যানি নামে কাউকে চেনেন না।

পরে মেরির বোন জানান, মেরি তার অন্যান্য সন্তানদের জন্ম দেয়ার আগে ড্যানি নামে একটি মৃত ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। সেই বেদনা এতটাই তীব্র ছিল যে মেরি তার হারানো সন্তানের কথা আর কখনও কাউকে বলেননি। এই ঘটনা ডা. ক্রিস্টোফারের কর্মজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

তিনি মূলত ছিলেন কার্ডিওলজিস্ট বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং নিউরোবায়োলজিতে পিএইচডিও করছিলেন। মেরির এমন আচরণ তার কাছে এতটাই বিস্ময়কর মনে হয়েছে যে তিনি তার প্রচলিত চিকিৎসাবিদ্যা থেকে সরে এসে মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ কেমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান সে বিষয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নেন।

২৫ বছর পরে এসে ডা. ক্রিস্টোফার মৃত্যু পথযাত্রী মানুষদের স্বপ্ন এবং তারা শেষ সময়ে কী দেখেন সে-সংক্রান্ত গবেষণায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের একজন হয়ে ওঠেন।

আরো পড়ুন  রাতের মধ্যে ঢাকাসহ ১০ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়

মৃত্যুর আগে মানুষ কী ভাবে আর কী দেখে সে বিষয়ে ডা. ক্রিস্টোফার বিবিসিকে বলেন, তিনি মৃত্যু পথযাত্রী মানুষদের তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো পুনরুজ্জীবিত হতে দেখেছেন।

সেইসঙ্গে তিনি দেখেছেন, মৃত্যু পথযাত্রীরা তাদের মা, বাবা, সন্তান এবং এমনকি পোষা প্রাণীদের সঙ্গে কথা বলছেন। যারা বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গেছে।

তবে এসব রোগীরা কিন্তু মৃত্যুর ঠিক আগে আগে মানসিকভাবে বিভ্রান্ত বা অসংলগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।

ক্রিস্টোফার জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি যেসব রোগীদের ওপর গবেষণা করেছেন তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য ক্ষয় হতে থাকলেও তারা মানসিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে বেশ শক্ত ছিলেন।

যদিও অনেক চিকিৎসক এসব ঘটনাকে রোগীর হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রান্তির কারণে হচ্ছে বলে মনে করেন। তাদের মতে, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন।

আরো পড়ুন  মানব মস্তিষ্কের কোষে জীবন্ত রোবট!

ডা. ক্রিস্টোফার কের-এর বই, ‘ডেথ ইজ বাট এ ড্রিম : ফাইন্ডিং হোপ অ্যান্ড মিনিং অ্যাট লাইফস অ্যান্ড’, ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং বইটি ১০টি ভাষায় অনূদিত হয়।

তিনি তার গবেষণা এবং জীবনে সায়াহ্নে শেষ সময়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও বলেন, মৃত্যু মানুষকে তার জীবনের এক প্রতিবিম্বের সামনে দাঁড় করায়। মানুষ তখন তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর ফোকাস করে, যা জীবদ্দশায় তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ভাবনা প্রায়ই খুব অর্থপূর্ণ এবং শান্তিদায়ক উপায়ে ফিরে আসে, যা জীবনকে সার্থকতা দেয় এবং ফলস্বরূপ, মৃত্যুর ভয় কমে যায়।

অর্থাৎ ভালো কাজ করলে মৃত্যুর সময় মানুষ অনেক শান্ত ও ভালো থাকে। খারাপ কাজ করলে অনেকটা অদ্ভূত আচরণ শুরু করে। কারণ, তখন সে তার কৃতকর্ম দেখতে পায়।

সর্বশেষ সংবাদ