15 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024
[adinserter block="1"]

দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে পার্কে

ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্ট মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন।

তবে দেশটির ঠিক কোথায় তিনি অবস্থান করছেন সেটি এখনও অজানা। এছাড়া হাসিনা ইস্যুতে ভারত সরকারও নীরব।

এমন অবস্থায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, রাজধানী দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন হাসিনা। এমনকি তাকে তার দলবল নিয়ে দিল্লির অন্যতম অভিজাত পার্ক লোদি গার্ডেনেও ঘুরতে দেখা গেছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী পালাতে বাধ্য হওয়ার পর থেকে নয়াদিল্লির নৈশভোজের অনুষ্ঠানগুলোতে যে ইস্যুটি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে তা হলো: শেখ হাসিনা এখন কোথায়?

গত ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা যখন তার ঢাকার বাসভবনের দিকে মিছিল সহকারে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং বাংলাদেশি সামরিক বিমানে করে ভারতের গাজিয়াবাদের কাছে একটি বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে নামেন। নরেন্দ্র মোদির সরকার তখন থেকে নিশ্চিত করেছে, তিনি ভারতেই আছেন।

তবে হাসিনার বিষয়ে আরও কিছু বলতে বরারবরই অস্বীকার করছে ভারতীয় সরকার। তবে এটি হাসিনার অবস্থান নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বন্ধ করতে পারেনি।

বিভিন্ন মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতার সাথে ভারতের এই আড্ডাবাজ ক্লাসের সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে দাবি করেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় সরকারের একটি সেফ হাউসে রয়েছেন; তিনি তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সাথে থাকছেন যিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিল্লিভিত্তিক পদে আঞ্চলিক চাকরি নিয়েছেন; এমনকি তাকে (হাসিনাকে) তার দলবলের সাথে দিল্লির অন্যতম সেরা পার্ক লোদি গার্ডেনে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেছে।

আরো পড়ুন  উড্ডয়নের পরপর বিমানে ৫ তরুণ-তরুণীর যৌনাচার, অতঃপর...

আওয়ামী লীগ যখন বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিল তখন হাসিনার শীর্ষ বিদেশী সমর্থক ছিল মোদি সরকার। হাসিনার পালিয়ে আসার কথা স্বীকার করলেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান বা অন্যান্য বিষয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে তারা। দিল্লির দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো বেশিরভাগই এমন দাবিও করা বন্ধ করে দিয়েছে যে— ক্ষমতাচ্যুত-পরবর্তী সময়ে তারা শেখ হাসিনার প্রথম সাক্ষাৎকার পাবে।

এর কয়েকটি কারণ রয়েছে। হাসিনার পতনের পর ক্ষমতা গ্রহণ করা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলন-বিক্ষোভের সময় শত শত মানুষের হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে দায়ী করেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তিও রয়েছে — যা ২০১৩ সালে হাসিনার নিজের সরকারের সময়েই স্বাক্ষরিত — যেটি তত্ত্বগতভাবে হাসিনার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা যেতে পারে যদি বাংলাদেশের নতুন সরকার তাকে গ্রেপ্তার করতে চায়।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, “ভারতের সাথে (স্বাক্ষরিত) প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, আমরা তাকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণের দাবি জানাতে পারি। আপাতত, আমরা আশা করি ভারত তাকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা ঘটাতে দেবে না, কারণ তিনি মিথ্যা ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।”

আরো পড়ুন  ইসরায়েলের এত অস্ত্র এলো কোথা থেকে?

এছাড়া হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূস নিজেই বলেছেন, ‘বাংলাদেশ তাকে (হাসিনাকে) ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত ভারত যদি তাকে রাখতেই চায়, তবে এক্ষেত্রে শর্ত থাকবে— তাকে চুপ থাকতে হবে।’

পলাতক আঞ্চলিক নেতাদের আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে ভারতের। দালাই লামা ১৯৫৯ সালে চীনের তিব্বত দখলের পর পালিয়ে ভারতে বসতি স্থাপন করেন। যদিও তিনি রাজনৈতিক বিষয়গুলো (ভারত ভিত্তিক) একটি বেসামরিক নির্বাসিত প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এছাড়া তিব্বতের আধ্যাত্মিক এই নেতা সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন। এই পদক্ষেপে বেইজিং বিক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মোদি সরকারের সম্মতি ছাড়া এসব কিছুই ঘটত না।

এছাড়া আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর পরিবারও ১৯৯২ সালে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। তার স্ত্রী ফাতানা নাজিব এবং সন্তানরা এখনও তাদের বেশিরভাগ সময় ভারতে কাটায় বলে জানা গেছে।

এর আগে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের অধিকাংশকে ঢাকায় অভ্যুত্থানে হত্যা করার পর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ১৯৭৫ সালের পর বেশ কয়েক বছর ভারতে আশ্রয়ে ছিলেন।

আরো পড়ুন  গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবর, মিলল ৪৯ লাশ

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সরকারের সময় দায়িত্বপালন করা সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন বলেছেন, “প্রতিবেশী দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে আসার অনেক নজির রয়েছে। আমরা সবসময় তাদের (পালিয়ে আসা নেতাদের) থাকার অনুমতি দিয়েছি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা আমাদের ইচ্ছাকে সম্মান করে রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থেকেছে।”

শেখ হাসিনা ভারতের রাজনৈতিক স্পেকট্রামজুড়ে ব্যাপকভাবে সমর্থন পেয়ে থাকেন। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে তাকে “ইসলামপন্থি চরমপন্থার” বিরুদ্ধে নিরাপত্তার উপায় বা বাঁধ হিসাবে দেখা হয় এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তার প্রয়াত পিতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে হাসিনার অবস্থানের সংবেদনশীলতার অর্থ হচ্ছে— অতিসতর্কতার কোনও আবরণ আপাতত এই বিষয়টিকে ঘিরে থাকতে পারে এবং সেটিও আবার নয়াদিল্লির ইচ্ছায়।

মেনন বলছেন, “এগুলো অন্তরঙ্গতার সমস্যা এবং আমাদের প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে এই জিনিসগুলি বেশ জটিল হয়। এটা এমন নয় যে— আমরা বিশ্বের অন্য প্রান্তের দেশগুলোর সাথেও একই আচরণ করছি।”

সর্বশেষ সংবাদ