18 C
Dhaka
Sunday, December 22, 2024
[adinserter block="1"]

পল্লী বিদ্যুতে ৪০ হাজারের বেশি ছুটির আবেদন, ব্ল্যাকআউটের শঙ্কা

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূত করে অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করার দুই দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গত শনিবার (২৪ আগস্ট) ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন আন্দোলনরত ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেই আলটিমেটামের সময় শেষ হচ্ছে আজ।

গ্রামাঞ্চলের ৮০ শতাংশ এলাকার ৩ কোটি ৬০ লাখের বেশি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, যা বিদ্যুৎ সরবরাহের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ। প্রশ্ন উঠেছে আলটিমেটাম অনুযায়ী যদি দাবি-দাওয়া পূরণ না হয় তবে কি ঘটবে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাবি আদায় না হলে সমিতির কর্মচারীরা পূর্ণ কর্মবিরতিতে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ বিভ্রাটে (ব্ল্যাকআউট) পড়তে পারেন।

এ বিষয়ে কথা হয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনের সমন্বয়ক প্রকৌশলী রাজন কুমার দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা যে দুই দফা দাবি দিয়েছি তা যুক্তিযুক্ত ও ন্যায্য। দাবি নিয়ে বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও কোনো সঠিক সমাধান আমরা পাইনি। গত ৮ আগস্টেও পল্লী বিদ্যুৎ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে একটি আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও তা অফিস অর্ডার আকারে প্রকাশ করা হয়নি। আমরা বুঝতে পারছি, পল্লী বিদ্যুৎ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

আরো পড়ুন  পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালকসহ ১৪ জন পলাতক

রাজন কুমার দাস বলেন, এবার আমরা ৭২ ঘণ্টার একটা আলটিমেটাম দিয়েছি, যদি এর মধ্যে সুষ্ঠু সমাধান না আসে, তাহলে ঘোষণা অনুযায়ী আমরা গণছুটিতে যাব। ইতোমধ্যে সমিতির ৪০ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা (মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৪৫ হাজারের কাছাকাছি) ছুটির আবেদন করেছে। যদি দাবি না মানা হয় তাহলে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটিতে গেলে দেশজুড়ে বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

‘কিন্তু আমরা আসলে চাই না এমন কিছু হোক বা গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়ুক। আমরা চাই, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল করিম খান, পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ বিভাগ মিলে আমাদের একটি সুষ্ঠু সমাধান দিক।’

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনের এ সমন্বয়ক জানান, ইতোমধ্যে তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করছেন। পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছেন। শিগগিরই হয়ত কোনো সমাধান আসতে পারে।

আন্দোলনের বিষয়বস্তু তুলে ধরে গত শনিবার এক বার্তায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সপ্তাহে সাত দিনই রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতশাসন, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব অনিয়মিত/চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।‌ দাবি আদায়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল ও গ্রাহক সেবা চালু রেখে সারা দেশে একযোগে গত ৫ মে থেকে টানা পাঁচদিন কর্মবিরতির ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়। অতঃপর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে দাবি পেশ করা হয়।

আরো পড়ুন  নিজ আয়েই প্রতিস্থাপন খরচ মেটাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

বার্তায় আরও বলা হয়, সন্তোষজনক ফলাফল না আসায় পুনরায় ১ জুলাই থেকে টানা ১০ দিন কর্মবিরতির ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, তিনজন অতিরিক্ত সচিব, আরইবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্মের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এখন সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং গত ১ আগস্ট আরইবি, সমিতি এবং মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই তারিখে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় সমিতির দুজন জিএম এবং চারজন ডিজিএমকে শাস্তিমূলক বদলির দপ্তরাদেশ করে আরইবি।

আরো পড়ুন  আরেকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন নাহিদ ইসলাম

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনরায় আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের খবর পেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গত ২২ আগস্ট পূর্বগঠিত কমিটির সভা আয়োজন করা হয়। ওই সভায় পূর্ব নোটিশ ছাড়াই আরইবির সব প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকেন। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ফলে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজমান থাকায় আরইবির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সমিতি থেকে সকল প্রকার তথ্য সরবরাহ তথা আরইবির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।

আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব ঘোষিত দুই দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ন্যায্য দাবি প্রতিহত করে কর্মপরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত আরইবির কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল, দুষ্কৃতকারী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার শাস্তি নিশ্চিতপূর্বক সঠিক ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদয় হস্তক্ষেপ এবং ছাত্র-জনতার সহযোগিতা কামনা করছি।

সর্বশেষ সংবাদ