17 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024
[adinserter block="1"]

এক মুক্তিযোদ্ধার ৭ ভুয়া সন্তান, কোটায় ৫ জনের চাকরি

রাজপথ যখন কোটা সংস্কার নিয়ে উত্তাল ঠিক তখনই সামনে এসেছে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার বিরল পিতৃত্বের ঘটনা। নিজের ঔরসজাত সন্তান দুজন হলেও অন্যদের চাকরি দিতে তিনি হয়েছেন আরও সাত সন্তানের বাবা! নিজের সনদ অপব্যবহার করে এদের মধ্যে পাঁচজনকে দিয়েছেন সরকারি চাকরি। তবে শুধু সন্তানদের চাকরি নয়, বাবা সেজে নিজেও রাতারাতি কামিয়েছেন লাখ লাখ টাকা!

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ক্ষিতারেরপাড়ার (রানীরপাড়া) বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বিরল এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। রফিকুল ইসলাম সোনাতলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডারও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ও রেবেকা সুলতানা দম্পতির দুই সন্তান রাশেদা আক্তার ও মোর্শেদা আক্তার। তারা দুজনই গৃহিণী। অন্যদিকে রফিকুলের ভুয়া সন্তানরা হলেন- দুই ভাই আহসান হাবিব হান্নান ও জিয়াউর রহমান, বেলাল হোসেন, ফরহাদ হোসেন, সালেক উদ্দিন, রাকিব হাসান ও মৌসুমী আক্তার।

আরো পড়ুন  টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না এ ভূমি কর্মকর্তা

এর মধ্যে হান্নান ও জিয়াউরের প্রকৃত বাবা সোনাতলার দক্ষিণ রানীরপাড়ার জাফর আলী। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের পরিচয় ব্যবহার করে হান্নান পুলিশে চাকরি নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি গাইবান্ধা জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সে কর্মরত। একইভাবে অপর ভাই জিয়াউর পেয়েছেন সারের ডিলারশিপ।

অন্যদিকে বেলালের আসল বাবা ক্ষিতারেরপাড়া এলাকার জবেদ আলী। তবে কোটা ব্যবহার করে বেলাল ২০০১ সাল থেকে পুলিশের চাকরি করছেন। তার বর্তমান কর্মস্থল ঢাকা মহানগর পুলিশ।

ফরহাদ হোসেনের প্রকৃত বাবা একই এলাকার জাহিদুল ইসলাম। তবে রফিকুলের মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে ফরহাদ চাকরি নিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসে। একইভাবে রফিকুলের সনদ ব্যবহার করে ক্ষিতারেরপাড়ার নায়েব আলীর ছেলে সালেকও পুলিশ কনস্টেবল হয়েছেন।

একইভাবে রফিকুলের সনদ ব্যবহার করে সোনাতলার জুমারবাড়ী এলাকার মৌমিনুল ইসলামের ছেলে রাকিব চাকরি নিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরে। আর ভাতিজি মৌসুমী আক্তারকে নিজের মেয়ে সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি করেছেন সরকারি আজিজুল হক কলেজে।

আরো পড়ুন  ১৭ বছরের দাম্পত্য জীবনে সন্তান না হওয়ায় স্বামীকে তালাক দিলেন স্ত্রী, অতঃপর…

এভাবে নিজের সনদের মাধ্যমে ভুয়া সন্তানদের চাকরিসহ অন্যান্য সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম দৈনিক সমকাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রফিকুলের এসব কর্মকাণ্ড দেখে ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দেন উপজেলার রানীরপাড়ার কেল্লাগাড়ী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন ও নিমেরপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তিনি অন্তত সাতজনকে সন্তান সাজিয়ে চাকরি ও অন্যান্য সুবিধা পেতে সহায়তা করেছেন। এভাবে অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান সাজিয়ে সরকারি সুবিধা পেতে সহায়তা করে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

অভিযোগ পাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্তে নামে দুদক। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় রফিকুল ও তার কথিত তিন সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একইসঙ্গে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন রফিকুলের কথিত তিন সন্তান।

আরো পড়ুন  প্রবাসীর স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি তুলে চাঁদা দাবি, গ্রেপ্তার ৪

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দুদক বগুড়ার সহকারী পরিচালক জাহিদ হাসান জানান, রফিকুল ও বেলাল যোগসাজশে মুক্তিযোদ্ধার সনদে চাকরি নিয়ে এ পর্যন্ত ৫০ লাখ ১৮ হাজার টাকার বেশি সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। অন্য দুই মামলায় হান্নানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ৫০ লাখ ১৮ হাজার ও ফরহাদের বিরুদ্ধে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুলের দাবি, তিনি এসব সন্তানকে দত্তক নিয়েছেন। তার ভাষ্য, পালক হলেও তারা আমার নিজের সন্তানের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

তিনি বলেন, মামলা হয়েছে, আদালতে মোকাবিলা করব। এ নিয়ে বিচলিত নই।

সর্বশেষ সংবাদ