26 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024
[adinserter block="1"]

স্ত্রী-সন্তানের চেয়ে আসিমের কাছে দেশটাই ছিল বড়

মুক্তিযুদ্ধের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা যেমন দেশের জন্য হাসতে হাসতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিয়েছেন। নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে মানুষের মাঝে দেশপ্রেমকে তুমুলভাবে জাগিয়ে তুলেছেন। তাদেরেই একজন চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানের পাইলট বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ।

নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনমানুষকে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দেশের আপামর জনতা। শুক্রবার (১০ মে) শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যে চতুর্থ ম্যাচ শুরুর আগে জাওয়াদের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। তার বীরত্ব দেশের মানুষের মনে নাড়া দিয়েছে। প্রশাংসায় ভাসছেন অমর এই বীর সন্তান। আমৃত্যু রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে সবাইকে কাঁদালেন তিনি।

স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদকে নিয়ে নেট দুনিয়ায় অনেকে অনেক মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, এমন বীরের মৃত্যু নেই। কালে কালে ক্ষণে ক্ষণে আবারও ফিরে আসবেন তারা। নিজের স্ত্রী-সন্তানের চেয়ে দেশকে আর দেশের মানুষকে বড় করে দেখেছেন তিনি। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও দেশের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বিমানকে নিয়ে গেছেন জনশূন্য এলাকায়। অনেকেই তাকে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের সঙ্গে তুলনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। দোয়া করেছেন এই বীরের জন্য।

আরো পড়ুন  ১৯৯৬ সালের ক্যালেন্ডারেই চলবে ২০২৪ সাল!

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে উড্ডয়নরত অবস্থায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ‘ওয়াইএকে ১৩০’ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান উড্ডয়নকালে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ সময় বিমানটির পেছন দিকে আগুন লেগে যায়। বিমানে থাকা দুজন পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে যান। পরে বিমানটি চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের অদূরে কর্ণফুলী নদীতে আছড়ে পড়ে। বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে এলে তাদের উদ্ধার করে বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসিম জাওয়াদ নামে একজন পাইলটের মৃত্যু হয়। উইং কমান্ডার সুহান জহুরুল হকের অবস্থা মোটামুটি ভালো। তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে সামাজিক মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বিমানটিতে আগুন লাগার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, আকাশে উড্ডয়নরত থাকা অবস্থায় প্রশিক্ষণ বিমানটিতে আগুন লেগে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এরপরপরই আগুন লেগে যেতে দেখা যায় বিমানটিতে। তখনই পাইলটরা প্যারাসুটে ঝুলে কর্ণফুলী নদীতে পড়েন।

হাফিজুর রহমান ফেসবুকে লেখেন, আসিম জাওয়াদ অনেকগুলো জীবন বাঁচিয়ে প্রমাণ করেছেন, বীরশ্রেষ্ট মতিউররা এখনও এদেশে জন্মায়।

ফাহিম রহমান নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, বীরদের কখনও মৃত্যু হয় না। লাখো শহীদের এ মাটিতে বীরেরা বার বার জন্মায়। কখনও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান হয়ে আবার কখনও বা স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ হয়ে।

আরো পড়ুন  ছবি বিকৃত করে পলকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার

আরেকজন স্ট্যাটাসে বলেন, বাঁচার সুযোগ থাকলেও জীবন উৎসর্গ করেন পাইলট আসিম জাওয়াদ। নিজে মরে গিয়ে বাঁচিয়ে গেলেন অনেককে।

১৯৯২ সালের ২০ মার্চ মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার গোপালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ডা. মো. আমান উল্লাহ এবং মাতার নাম নীলুফা আক্তার খানম।

তিনি ২০০৭ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) থেকে বিএসসি (অ্যারো) পাস করেন।

স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। চাকরিকালে তিনি বিমানবাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পেশাদারী দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমানবাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমানবাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এ ছাড়াও ভারতীয় বিমানবাহিনী কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘Chief of Air Staff’s Trophy for Best in Flying (Indian Air Force)’ অর্জন করেন।

আরো পড়ুন  রিমান্ডে থাকা আসিফ মাহতাবকে নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

চাকরিকালে তিনি দেশে-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ থেকে এভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। এ ছাড়াও তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন।

জানা গেছে, সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক শিক্ষক নিলুফা আক্তার খানম ও চিকিৎসক আমানুল্লাহর একমাত্র সন্তান ছিলেন আসিম জাওয়াদ রিফাত। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কান্না করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন মা নিলুফা।

নিহত জাওয়াদের বড় মামা সুরুজ খান জানান, অত্যন্ত মেধাবী ছিল জাওয়াদ। স্কুল ও কলেজজীবনে সব সময় প্রথম হয়েছে। ছোটবেলা থেকে জাওয়াদের স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হয়ে পাইলটও হয়েছিল। কিন্তু সেটি ছিল মাত্র অল্প সময়ের জন্য। পরিবারের মাথায় বাজ নেমে পড়েছে জাওয়াদকে হারিয়ে।’ আগামীকাল শুক্রবার জাওয়াদের মরদেহ মানিকগঞ্জে আনা হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ সংবাদ