তাঁবুর শহর নামে পরিচিত মিনা প্রান্তর। এতে রাতযাপনের মাধ্যমে শুরু হয় হজের অনু্ষ্ঠানিকতা। ৮ জিলহজ হজের প্রথম দিন। এ দিনের কাজ হলো মিনায় অবস্থান করা। ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা।
মিনায় অবস্থানের পর একে একে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, মুজদালিফায় রাতযাপন এবং জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানিসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন হাজিরা। জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ ও তাওয়াফের মধ্যদিয়ে ১২ জিলহজ শেষ হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা।
অনেকেই ৮ জিলহজের আগেই ইহরাম বাঁধেন, এমনকি ৭ জিলহজে মিনায় চলে যান। যারা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি হজের জন্য মক্কায় যান তারা বিমানে উঠার আগেই ইহরাম বেঁধে থাকেন। কারণ বাংলাদেশিদের ইহরাম বাঁধার স্থান জেদ্দায় পৌঁছার আগেই পার হয়ে যায়।
মিনায় এসে হাজিরা ৮ জিলহজের জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও নয় জিলহজের ফজর পড়েন। সবাই জিকির আযকার করেন ও তালবিয়া পাঠ করেন।
মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। মিনাকে তাবুর শহর বলা হয়। এটা মক্কার পার্শ্ববর্তী এলাকা। মক্কা থেকে আরাফাতের ময়দানের দিকে যাওয়ার মহাসড়কের পাশে মিনার অবস্থান। মিনার আয়তন প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার।
মিনায় হাজিদের রাত কাটানোর জন্য আলাদা তাঁবু রয়েছে। প্রত্যেক তাঁবুর আলাদা আলাদা নম্বর রয়েছে। এখানে হাজিদের এজেন্সির পক্ষ থেকে খাবার পরিবেশন করা হয়। মিনার তাঁবুগুলো সারা বছর গুটিয়ে রাখা হয় ও সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ করে রাখা হয়।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করেছেন। হাদিসে এসেছে, হযরত জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ জিলহজ মিনায় গমন করেছেন এবং সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ পড়েছেন। (সহিহ মুসলিম ১/৩৯৬)
আরেক বর্ণনায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) বলেন, সুন্নত হলো ইমাম জোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজর মিনায় পড়াবেন। এরপর মিনা হতে আরাফায় রওনা করবেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৮/৪৭৯, হাদিস: ১৪৭৬০)
৮ জিলহজ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। আর এই দিনে জোহর থেকে ৯ তারিখ সকাল পর্যন্ত পুরো সময় একনাগাড়ে সেখানে অবস্থান করা মোস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার: ২/৫০৩)
মিনার উদ্দেশ্যে ৮ জিলহজ রওনা করা মোস্তাহাব। ৮ জিলহজ সূর্যোদয়ের আগে কিংবা ৭ জিলহজ মিনায় চলে যাওয়া অনুত্তম। অবশ্য মুয়াল্লিমের পক্ষ থেকে নিতে বাধ্য করলে যাওয়া দোষণীয় নয়। (আলমুহিতুল বুরহানি: ৩/৪০২)
মিনায় অবস্থানের পুরোটা সময় হাজিরা নামাজ ছাড়াও তালবিয়া, জিকির ও কোরআন তিলাওয়াতে মশগুল থাকবেন। এখানে অবস্থানের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। অল্প সময়ও জিকির-আযকার থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। অনর্থক গল্প-গুজব থেকে বিরত থাকাও আবশ্যক।