18 C
Dhaka
Sunday, December 22, 2024
[adinserter block="1"]

বাঘের পর এবার কুমিরের মুখ থেকে বাঁচলেন মৌয়াল কুদ্দুস!

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের গহীনে ঢুকে মধু কাটার পর নদীতে গোসল করতে গিয়ে আব্দুল কুদ্দুস নামে এক মৌয়াল কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন নিয়ে ফিরেছেন। কুমিরের কামড়ে তার বাম হাতে গুরুতর জখম হয়েছে।

আব্দুল কুদ্দুসকে (৫৫) শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের মৃত মোকছেদ সানার ছেলে।

এর আগে ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন আব্দুল কুদ্দুসসহ ৭ জনের একটি মৌয়াল দল।

মঙ্গলবার (১৫ মে) লোকালয়ে ফিরে আসার পর তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এর আগে গত ১১ মে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া নদীতে এ ঘটনাটি ঘটে।

কুদ্দুসের সহকর্মী মৌয়ালরা জানান, গত ৭-৮ দিন আগে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে মধু সংগ্রহের পাস নিয়ে সুন্দরবনে ঢোকেন আব্দুল কুদ্দুসসহ ছয় মৌয়ালের একটি দল। তাদের মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস ও আব্দুল হালিম আপন দুই ভাই। গত ১১ মে সুন্দবনের গহীনে তারা অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি মধুর চাক পেয়ে তা ভাঙার পর কলাগাছিয়া নদীতে গোসল করতে নামেন। এসময় নদীর হাঁটুপানিতে নেমে গোসলের সময় হঠাৎ আব্দুল কুদ্দুসকে পানির মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখেন অন্যরা। পানিতে রক্ত ভেসে উঠতে দেখে তার ভাই হালিমসহ অন্যরা।

আরো পড়ুন  ‘সানভিস বাই তনি’র তথ্যে লাখানি কালেকশনও বন্ধ

এসময় পানির ওপরে কুমিরের লেজ ভাসতে দেখে তারা বুঝতে পেরে তাদের হাতে থাকা মগ ও পাতিল নিয়ে সজোরে পানিতে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আব্দুল কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি শুরু করেন। এভাবে টানাটানির এক পর্যায়ে হঠাৎ শিকার ছেড়ে নদীর গভীরে চলে যায় কুমিরটি।

ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে আব্দুল কুদ্দুস জানান, কুমির যখন তার হাত কামড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। কুমির ঘুরপাক খেতে থাকায় তিনিও সমানতালে পানিতে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পারায় এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

আরো পড়ুন  ৫২৩ হজযাত্রীর টাকা নিয়ে উধাও ২ এজেন্সি মালিক

সহোদর আব্দুল হালিম জানান, বিষয়টি বুঝে উঠতে তাদের দেরি হয়। ফলে খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে কুমিরের লেজ আছড়ে পড়া দেখে তিনি জীবনের মায়া ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়েন ভাইকে বাঁচাতে। তার চিৎকারে দলের অন্য চার সদস্য বক্স গাজী, শহিদুল, সিরাজুল ও এলাহি বক্সও এগিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে সবাই মিলে কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি এবং পানিতে প্রচণ্ড শব্দ তৈরি করলে কুমির শিকার ছেড়ে চলে যায়।

তিনি আরও জানান, গত ৩৫-৩৬ বছর ধরে মাছ, কাঁকড়া শিকারসহ মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে যাতায়াত করেন তারা। এর আগে ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন তারা। তখন তাদের দলে ছিলেন সাতজন। বাঘ লাফ দিয়ে আসার মুহূর্তে তারা দেখতে পেয়ে সবাই মিলে চিৎকার এবং লাঠিসোটা দিয়ে গাছে আঘাত করে এলাকা ছেড়ে নিজেদের রক্ষা করেন। ২০০৮ সালে মধু কাটতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন তাদের খালু দাতিনাখালী গ্রামের গোলাম মোস্তফা।

আরো পড়ুন  রংপুর মেডিকেলের আইসিইউ ইউনিটে আগুন

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন-সংরক্ষক এ.কে.এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনে যাত্রা শুরুর আগে মৌয়ালদের বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণী থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। বৈধভাবে যেসব মৌয়াল মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণীর কবলে পড়ে হতাহত হন তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে সরকারি সহায়তার জন্য নাম প্রস্তাব করা হয়।

বনবিভাগের দেয়া তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে কুমির ও বাঘের আক্রমণে আহত হন আরও দুজন।

সর্বশেষ সংবাদ