15 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024
[adinserter block="1"]

মাঠের মধ্যে ১৯ কোটি টাকার সেতু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বাসিন্দাদের স্বপ্ন ছিল তিতাস নদীর ওপর হবে একটি সেতু। সেই সেতু দিয়ে করবে যাতায়াত। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হাত ধরে শুরুও হয় সেতুর কাজ। তবে ২০৮ মিটার সেতুর কাজ ৩ বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামটি উপজেলা সদর থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। আখাউড়া উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের ওপর দিয়ে আসা সড়ক ব্যবহার করতে হয়।

আখাউড়া উপজেলার বাসিন্দা হলেও যোগাযোগব্যবস্থার সুবিধার কারণে মূলত জেলা সদরে ওই গ্রামের মানুষের যাতায়াত বেশি। ওই গ্রামের মানুষ কৃষিনির্ভর। সেখানকার নানা রকমের সবজি আখাউড়াসহ বিভিন্ন এলাকাতে বিক্রি হয়।

তিতাস নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি আখাউড়া- বরিশল সড়কের সঙ্গে যুক্ত করার কথা ছিল গ্রামটিকে। শুরু হয় ওই গ্রামকে বিভক্ত করা তিতাস নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ। কিন্তু কাজের ধীরগতিতে হতাশ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ২০৮ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৭০ শতাংশ। আর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে সেতুর সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শেষ হয়নি এখনো। এ অবস্থায় কবে কাজ শেষ হবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।

আরো পড়ুন  ভোট নিয়ে আ.লীগ নেতার প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্যে এমপির অগ্রিম ইস্তফা

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় তারা হতাশ। প্রথমে যেভাবে কাজ শুরু করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তখন মনে হয়েছে ১ বছরের মধ্যেই শেষ হবে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের সেতুর কাজ। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর কাজে কচ্ছপগতি শুরু হয়েছে। আর বর্তমানে কোনো মাসে তিন দিন, কোনো মাসে একদিন এভাবেই চলছে সেতুর কাজ।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ‘পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের পাশে তিতাস নদীর ওপর ২০৮ মিটার আরসিসি আর্চ গার্ডার সেতুটির নির্মাণকাজের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০২০-২১ অর্থবছরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজ কাজটির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। ব্যয় ধরা হয় ১৯ কোটি ২ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করার সময় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। দ্বিতীয়বারের মতো চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায় এলজিইডি।

আরো পড়ুন  বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটে উৎপাদন শুরু

সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী খাইরুল হাসান বলেন, নদীর মাঝখানে যে আর্চ ডিজাইনটা রয়েছে তা ফিটিংস করে ঢালাইয়ের কাজটা বাকি রয়েছে। সেটি শেষ হলেই আমাদের কাজ মোটামুটি শেষ হবে। এখন পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। ৩-৪ মাসের মধ্যেই কাজটা শেষ করতে পারব। তবে প্রয়োজনীও অর্থবরাদ্ধের অভাবে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জমি এখনো আমরা বুঝে পাইনি।

ধরখার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাফিকুল ইসলাম সেতু নির্মাণে ধীরগতির কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর একটি সেতুর দাবি ছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রচেষ্টায় সেতুটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। আমি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীকে কয়েকবার বলেছি। সেতুর নির্মাণ কাজ বিলম্বের বিষয়টি আইনমন্ত্রীও অবগত রয়েছেন।

আরো পড়ুন  ছাত্রদের ত্রাণসামগ্রী ছিনিয়ে নিলেন বিএনপি নেতা, উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

এ ব্যপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণ কাজের সময়সীমা ছিল আড়াই বছর। নির্ধারিত সময় শেষে হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয় দেড় বছর। যা শেষ হবে চলতি বছরের আগস্ট মাসে। বর্তমানে সেতুর ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের সময় বাড়িয়ে দেওয়ার সময় তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কাজটি দ্রত শেষ করার। আশা করছি এই সময়ে মধ্যেই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত অর্থবরাদ্দ পাওয়া যাবে। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে সংযোগ সড়কের প্রয়োজন। আগে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হোক।

সর্বশেষ সংবাদ