22 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024
[adinserter block="1"]

উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন বিএনপির সঙ্গে জড়িত যেসব নেতা

দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট। দলীয় সিদ্ধান্তে এই নির্বাচন বর্জন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরেও কয়েকজন নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

বুধবার (৮ মে) প্রথম ধাপে দেশের ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এ ধাপে মোট ১,৬৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এবার দলীয় মনোনয়ন দেয়া না হলেও নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ নেতাদের জয়জয়কার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জয়ী এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়ই আওয়ামী লীগের নেতা। এই পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অন্তত ৭ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

এর মধ্যে বান্দরবান সদর উপজেলায় বিজয়ী হন আব্দুল কুদ্দুছ। মোটরসাইকেল প্রতীকে তিনি ১৯ হাজার ১৪৪ ভোট পান। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরকে বড় ব্যবধানে হারান তিনি। আনারস প্রতীকে জাহাঙ্গীর পান ৩ হাজার ৩৬৬ ভোট।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় দোয়াত-কলম প্রতীকে ১৮ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা আমিনুল ইসলাম বাদশা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ ফারুক। মোটরসাইকেল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১৬ হাজার ৫২ ভোট।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দুটিতেই বেসরকারিভাবে জয় পেয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা। অন্য একটিতে জিতেছেন আওয়ামী লীগ নেতা। গোমস্তাপুর উপজেলায় আশরাফ হোসেন আলিম ও ভোলাহাট উপজেলার নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন আনোয়ার হোসেন। আশরাফ হোসেন গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এবং আনোয়ার হোসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাদের দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আরো পড়ুন  ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ’ নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, ভোলাহাট উপজেলায় আনোয়ারুল ইসলাম চিংড়ি মাছ প্রতীকে ১৩ হাজার ৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৬৬ ভোট। গোমস্তাপুর উপজেলায় মোহা. আশরাফ হোসেন আলিম আনারস প্রতীকে ৪০ হাজার ৬২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন রেজা ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৪০ হাজার ৬১ ভোট।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। আনাসর প্রতীকে ৩৪ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়েছে তিনি। আবদুল হামিদ ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য বলে জানা গেছে। নির্বাচনে তিনি হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দীনকে। দোয়াত-কলম প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ২৮ হাজার ৭৭ ভোট।

তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে বিএনপি থেকে যেসব নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে সেই তালিকায় মোহাম্মদ আবদুল হামিদের নাম পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন। ঘোড়া প্রতীকে তার প্রাপ্ত ভোট ১৮ হাজার ৯৬৯। উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রীনা পারভীনকে হারিয়েছেন তিনি। আনারস প্রতীকে রীনা পারভীন পেয়েছেন ১০ হাজার ২০৮ ভোট।

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। কাপ-পিরিচ প্রতীকে ১৩ হাজার ৩২২ ভোট পান তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমেদ আনারস প্রতীকে ১২ হাজার ৯৬৮টি ভোট পেয়েছেন।

আরো পড়ুন  যে বার্তা দিলেন ফখরুল

এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থী লড়াই করেন। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরীও রয়েছেন। তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৭৩ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। গত ২৬ এপ্রিল গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বহিষ্কৃতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতদের মধ্যে প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ২৮ জন চেয়ারম্যান পদে, ২৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং ২১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন।

দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া আরও অন্তত ৬৪ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩৬ জনকে বহিষ্কার করেছে দলটি।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে ‘অশুভ চক্রের সঙ্গে আঁতাত’ বলে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করেছিলেন রুহুল কবির রিজভী।

বিএনএপি থেকে বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা

১. মোহাঃ আনোয়ারুল ইসলাম- সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
বিএনপি।

২. বাবর আলী বিশ্বাস- সদস্য, চাঁপাইনববাগঞ্জ জেলা বিএনপি।
৩. ইমতিয়াজ আহমেদ হীরা- সাবেক ভিপি, নাটোর সদর উপজেলা।
৪. আফজাল হোসেন-সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, নলডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি, নাটোর।
৫. এ বি এম কাজল সরকার- সাবেক ছাত্রনেতা, হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপি, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা।
৬. এ্যাড. হাসনাত তারেক- সদস্য, আইনজীবী ফোরাম, হালুয়াঘাট উপজেলা, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা।
৭. শামসুর রশিদ মজনু- সাবেক সহ-সভাপতি, ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপি, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা।
৮. ইমরান হাসান পল্লব- সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ফুলপুর পৌর বিএনপি, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা।
৯. নামজুল আলম- সাংগঠনিক সম্পদক, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি ও ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক, সদর উপজেলা, কিশোরগঞ্জ।
১০. আব্দুর রহিম বাদশা- সাধারণ সম্পাদক, ০১ নং ওয়ার্ড, শ্রীবর্দী শহর বিএনপি, শেরপুর।
১১. মো. আমিনুল ইসলাম বাদশা- সদস্য, ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপি ও সদস্য, শেরপুর জেলা।
১২. সেবুল মিয়া- সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, যুক্তরাজ্য বিএনপি, বিশ্বনাথ উপজেলা, সিলেট।
১৩. গৌউছ খান- সাবেক আহ্বায়ক, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি, সিলেট।
১৪. গোলাপ মিয়া- সাংগঠনিক সম্পাদক, দিরাই উপজেলা বিএনপি, সুনামগঞ্জ।
১৫. গণেন্দ্র চন্দ্র দাস- সভাপতি, শাল্লা উপজেলা বিএনপি, সুনামগঞ্জ।
১৬. ফয়জুল কবির তালুকদার- সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জিয়ানগর উপজেলা বিএনপি, পিরোজপুর।
১৭. জাহিদুর রহমান তুষার- যুগ্ম আহ্বায়ক, হরিরামপুর উপজেলা যুবদল, মানিকগঞ্জ।
১৮. তোফাজ্জল হোসেন তোফাজ- সিনিয়র সহ-সভাপতি, সিঙ্গাইল উপজেলা বিএনপি, মানিকগঞ্জ।
১৯. মোশারফ হোসেন মুসা- সদস্য, হরিরামপুর উপজেলা বিএনপি, মানিকগঞ্জ।
২০. এজাদুর রহমান মিলন- সহ-সভাপতি, গাজীপুর জেলা বিএনপি ও সদস্য, সদর উপজেলা বিএনপি, গাজীপুর।
২১. ওমরাহ খান, সাবেক সহ-সভাপতি, নাসিরনগর উপজেলা বিএনপি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
২২. মানজারুল ইসলাম- সদস্য, লাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপি, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা।
২৩. রমিজ উদ্দীন লন্ডনী- যুগ্ম আহ্বায়ক, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি ও আহ্বাক, মেঘনা উপজেলা বিএনপি, কুমিল্লা উত্তর জেলা।
২৪. সারোয়ার হোসেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি, ঘোড়াঘাট উপজেলা বিএনপি, দিনাজপুর।
২৫. ইমন আলী- সহ-সভাপতি, রৌমারী উপজেলা বিএনপি, কুড়িগ্রাম।
২৬. ফারুক মৃধা- প্রাথমিক সদস্য, চরভদ্রাসন উপজেলা বিএনপি, ফরিদপুর।
২৭. এ কে এম নাজমুল হাসান- সাবেক সদস্য, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও সদর উপজেলা, ফরিদপুর।
২৮. রউফ উন-নবী- সাবেক সভাপতি, সদর উপজেলা বিএনপি, ফরিদপুর।

আরো পড়ুন  সচিবালয়ে হামলাকারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার
সর্বশেষ সংবাদ