দেশে প্রতিবছরই শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু সেই তুলনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে কাজের সুযোগের অভাবে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। বর্তমানে দেশে নারী বেকারের চেয়ে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেশি।
সোমবার (৬ মে) চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে বর্তমানে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ বেকার। এর মধ্যে পুরুষ বেকারের হার ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ আর নারী বেকারের হার ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ নারী বেকারের চেয়ে পুরুষ বেকার হার শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।
বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তি জনগোষ্ঠী বাড়লেও সেই তুলনায় দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। শ্রমশক্তিতে থাকা জনসংখ্যার মধ্যে কর্মে নিয়োজিত নারী পুরুষের সংখ্যা ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার। সেই হিসেবে শ্রমশক্তিতে থাকা বাকিরা বেকার। তিন মাস আগে কর্মে নিয়োজিত ছিল ৭ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কর্মে নিয়োজিত জনসংখ্যা বেড়েছে ৫০ হাজার। কিন্তু একই সময়ে ২ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হওয়ায় বেকার বেড়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষে বেকারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজার। যা তার আগের প্রান্তিক অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বেকারের সংখ্যা ছিল সাড়ে ২৩ লাখ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার জন।
শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে দেশের শ্রমশক্তিতে আছেন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৫৩ লাখ। তিন মাস আগে মোট জনসংখ্যার মধ্যে শ্রমশক্তিতে ছিল ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে শ্রমশক্তিতে যুক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার।
বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট বেকারের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। সর্বশেষ প্রতিবেদন হিসেবে মোট বেকারের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ৪০ হাজার আর নারী বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার। তিন মাসে আগে দেশে পুরুষ বেকার ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার আর নারী বেকার ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার। সেই হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে দেশে পুরুষ বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার আর নারী বেড়েছে ৭০ হাজার।
এদিকে, বেকারের বাইরে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছে। যাদের বড় অংশই শিক্ষার্থী, অসুস্থ, অবসরপ্রাপ্ত বা বয়স্ক লোক, কাজ করতে অক্ষম এবং কর্মে নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার। তিন মাস আগে এই সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার। শ্রমশক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা নারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার আর পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার।
বছরওয়ারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সাময়িক হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা বেশ কমেছে। গত বছর শেষে বেকার লোকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজারে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। বছরওয়ারি হিসাবে, গত বছর শেষে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্মসংস্থান বেশি কৃষিতে। বিবিএসের হিসাবে, জানুয়ারি-মার্চ মাস শেষে কৃষি খাতে কাজ করেন ৩ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার। শিল্প খাতে এ সংখ্যা ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার আর সেবা খাতে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার। গত ডিসেম্বর শেষে কৃষি খাতে ছিল ৩ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার নারী-পুরুষ, শিল্পে ১ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার আর সেবা খাতে ছিল ২ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার।
প্রসঙ্গত, সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি, কিন্তু কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তাদেরই বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি জরিপের আগে ৩০ দিন বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন, তারাও বেকার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।