মো. বদিউজ্জামান বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার মুরগির দর জানলেন ২৩০ টাকা কেজি। উচ্চমূল্য ভেবে কিনলেন না। পরেরদিন শুক্রবার এসে দেখলেন বিক্রেতারা আরও ২০ টাকা বেড়ে গেছে দাম।
বিস্ময়ভরা কণ্ঠে তিনি বিক্রেতাকে প্রশ্ন করলেন, দাম একদিনেই ২০ টাকা বেড়ে গেল কীভাবে?
ফারুক চিকেন ব্রয়লার নামে দোকানের বিক্রেতা মুহিন উদ্দিন বলেন, “হুট করে গতকাল রাতে মাল আসছে। এগুলো মালে দেখলাম রেট বেশি। ছোট-বড় মানভেদে ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায়ই আমরা কিনছি ভাই।”
বদিউজ্জামান আর মুরগি কিনলেন না। চলে গেলেন মাছের বাজারে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই যে রাতারাতি দাম বাড়ায়। এগুলো তো পূর্ব পরিকল্পিত। না হয় এক লাফে ২০ টাকা বাড়ে কীভাবে?”
শুক্রবার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি। অথচ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টাতেও দাম ছিল ২৩০ টাকা।
সোনালি মুরগি ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৫০ টাকা।
দাম কেন বেড়েছে- এই প্রশ্নে মেসার্স আল্লাহর দান চিকেন হাউজের বিক্রেতা রেজাউল কবির বলেন, “দেশে সিন্ডিকেট চলে ব্যাপক। না হয় গতকাল রাতে একদাম, আর আজ সকালে আরেক দাম।
“গাজী, সিপিসহ বিভিন্ন বড় কোম্পানিগুলোর সরকারি রেটই ছিল ১৫১ টাকা। কিন্তু এখন কয়েকদিনে ১৯৫ টাকা। সেই মাল ডিলাররা কিনে বাজারে আনে। তাদের কাছ থেকে আমরা কিনি। মুরগি বাজারে আসে কয়েক হাত ঘুরে।”
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, “একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বাজারে। প্রান্তিক খামারির খামারে বাচ্চা নাই। যারা করপোরেট গ্রুপগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তারা বাচ্চা পেলেও সাধারণ কেউ বাচ্চা পায়নি, পেলেও উচ্চ মূল্যে। প্রান্তিক খামারির মুরগি যখন বাজারে আসে তখনই মুরগির দাম কম থাকে।”
বিপিএ এক বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার বলেছে, কৃত্রিম সংকটে মুরগির বাচ্চা কিনতে না পেরে উৎপাদন থেকে বাধ্য হয়ে সরে যাচ্ছে প্রান্তিক খামারিরা।
একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করতে ২৮ থেকে ৩০ টাকা খরচ হয় দাবি করে এতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দাম ঠিক করে দিয়েছে ৬৩ টাকা। কিন্তু খামারিদের সেই বাচ্চা কিনতে হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির ফিড উৎপাদনে খরচ হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা জানিয়ে বিপিএ বলেছে, খামারিদের সেই ফিড কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে।
দাম বেড়েছে গরুর মাংসেরও।
শুক্রবার কারওয়ান বাজারে ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এলাকার বাজারে দর ছিল ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে মাংস বিক্রেতা মো. টিপু সুলতান বলেন, “চান রাইতে ৮০০ হইব। সবাই বেচব, একদিনই ব্যবসাটা করব। তবে এখন মাংসের দাম বাড়াই নাই আমরা। শুধু ভুড়ির দাম বাড়ছে একটু। ৩৫০ থাইক্যা ৫০০ হইছে।”
‘ঈদের পণ্যের’ কী খবর
গত কয়েক মাস ধরেই পোলাওয়ের চালের দাম নিয়ে ক্রেতার বিস্ময় তৈরি হয়েছে।
প্যাকেটজাত পোলাওয়ের চালের দাম উঠেছে ১৭০ টাকা পর্যন্ত, যা গত রোজার ঈদে ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
খোলা পোলাউয়ের চাল মানভেদে ৯০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের কুমিল্লা মহানগর স্টোরের বিক্রেতা মো. সাগর বলেন, “মানুষ কিনে কম। বছর দুয়েক আগে আমি রোজায় ২০০ বস্তা বিক্রি করেছি। এবার ৪০ বস্তা আনছি। কিন্তু বিক্রি নাই।”
বেড়ে গেছে সেমাইয়ের দামও। ২০০ গ্রাম ওজনের চিকন সেমাইয়ের প্যাকেটের দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
২০০ গ্রামের লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৪০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সুমি এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মো. সেলিম জানালেন, এক বস্তায় প্যাকেট থাকা বনফুল লাচ্ছা সেমাইয়ের পাইকারি দামই ২৫০ টাকা বেড়ে ২২০০ টাকা হয়েছে।
তিনি বলেন, “কোম্পানির কাছে মাল চাইলে বলে মাল নাই। মাল কবে হবে জিজ্ঞেস করলে বলে ঈদের আগে হবে না।
“বনফুল লাচ্চা সেমাই কয়েকদিন আগে কিনেছিলাম ৩৭ টাকায়। ৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন ৫০ টাকা গায়ের রেট, যা গত মাসের ১৫ তারিখের আগে ছিল ৪৫ টাকা। আর কুলসন চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা দরে।”
বেড়ে গেছে মশলার দামও। খুচরায় দারুচিনির কেজি ছিল ৪৪০ টাকা; ১৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।
এক মাসের ব্যবধানে পাকিস্তানি কিশমিশের দাম ৭০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ টাকায়, ভারতীয় কিশমিশ ১০০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকা হয়েছে।
কারওয়ান বাজারে মসলার পাইকারি দোকান ফরিদগঞ্জ বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. মিজান বলেন,এক সপ্তাহের ব্যবধানে এলাচের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০০ টাকা।
তবে চিনির দাম নতুন করে বাড়েনি। আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। পাওডার গুঁড়ো দুধের দামও আগের মতই রয়েছে।
ডিপ্লোমা ও ডানো কোম্পানি এক কেজি প্যাকেটের মূল্য ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে। গায়ের রেট রয়েছে ৮৪০ টাকা। কারওয়ানবাজারে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮২০ থেকে ৮২৫ টাকায়।